‘ওকে’—দুই অক্ষরের এই শব্দটির যে কত বিচিত্র ব্যবহার রয়েছে
‘ওকে’—দুই অক্ষরের এই শব্দটির যে কত বিচিত্র ব্যবহার রয়েছে, হিসাব নেই। বিশেষ্য, বিশেষণ, ক্রিয়া, ক্রিয়াবিশেষণ, প্রশ্নবোধক, হ্যাঁ–বোধক, না–বোধক, স্বীকৃতি, অনুমোদন, অনুমান, সম্ভাবনা, ঔদাসীন্য—প্রায় সব ধরনের বক্তব্য বা অনুভূতি প্রকাশেই এটি ব্যবহৃত হয়। বিশেষত আধুনিক তথ্যপ্রযুক্তিভিত্তিক যোগাযোগব্যবস্থায় ‘ওকে’র তো রমরমা অবস্থা। যে অল্প কিছু শব্দ ভূখণ্ড, জাতিগোষ্ঠী বা ভাষাগত দেয়াল টপকে হয়ে উঠেছে সর্বজনীন, ‘ওকে’ শব্দটি তাদেরই প্রধানতম প্রতিনিধি। তবে এর বয়স কিন্তু বেশি নয়। সর্বাধিক গ্রহণযোগ্য তথ্যানুসারে, মাত্র ১৮৫ বছর আগে এই শব্দের জন্ম। তা-ও আবার আজকের দিনটিতে।
১৮৩৯ সালের ২৩ মার্চ দ্য বস্টন মর্নিং পত্রিকায় প্রকাশিত নিবন্ধে প্রথম ‘ওকে’ শব্দটির লিখিত রূপ দেখা যায়। কেউ বলেন, নিবন্ধের লেখক চার্লস গর্ডন গ্রিন মজা করার জন্য সচেতনভাবেই শব্দটি ব্যবহার করেন। কেননা, সে সময় যুক্তরাষ্ট্রজুড়ে বিভিন্ন শব্দের সংক্ষিপ্ত রূপের ব্যবহার বাড়ছিল। আবার কারও মতে, ওটা ছিল নিছক মুদ্রণপ্রমাদ। তবে ব্যাপার যা-ই হোক, অল্প সময়ের মধ্যেই শব্দটি লোকমুখে ছড়িয়ে পড়ে এবং সময়ের সঙ্গে সঙ্গে বেশ জনপ্রিয় হয়ে ওঠে। অন্যান্য পত্র-পত্রিকায়ও এর ব্যবহার বাড়তে থাকে। প্রসঙ্গত, ‘অল কারেক্ট’ শব্দদ্বয়ের ভুল বানানের সংক্ষিপ্ত রূপ হিসেবে ‘ওকে’ লিখেছিলেন গ্রিন।
তবে কেউ কেউ আবার মনে করেন, একটি রাজনৈতিক স্লোগান থেকে শব্দটির উৎপত্তি। ১৮৪০ সালে যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট প্রার্থী মার্টিন ভ্যান বিউরেনের নির্বাচনী স্লোগান ছিল—ভোট ফর ওকে। উল্লেখ্য, বিউরেনের ডাকনাম ছিল ‘ওল্ড কিন্ডারহুক’। এই ঘটনার মধ্য দিয়ে শব্দটি একেবারে গণমানুষের মুখে মুখে ছড়িয়ে পড়ে। ১৮৬৪ সালে এটি অভিধানভুক্ত হয়। এর শতাধিক বছর পর, ১৯৬৭ সালে মার্কিন মনোচিকিৎসক ও লেখক টমাস অ্যান্থনি হ্যারিস আই অ্যাম ওকে—ইউ আর ওকে নামে একটি বই লেখেন। বইটি তুমুল জনপ্রিয়তা পায়।
কারও মতে, জনপ্রিয় একটি বিস্কুটের নাম থেকে এ শব্দের উৎপত্তি। কেউ বলেন, ওল্ড কিউকুক নামের জনৈক ব্যবসায়ীর নামের আদ্যক্ষর থেকে শব্দটি এসেছে। তবে বিখ্যাত মার্কিন ভাষাবিদ অ্যালেন ওয়াকার রিড ‘ওকে’ শব্দের উৎস গবেষণা করে রায় দেন যে এটি দ্য বস্টন মর্নিং পত্রিকায় ছাপা হওয়া চার্লস গর্ডন গ্রিনের সেই নিবন্ধ থেকেই এসেছে। তাঁর গবেষণার ওপর ভিত্তি করে অধ্যাপক অ্যালেন মেটক্যাফ ‘ওকে: দ্য ইম্প্রোবাবল স্টোরি অব আমেরিকাস গ্রেটেস্ট ওয়ার্ড’ শিরোনামে একটি নিবন্ধ লেখেন। সেখানেই তিনি আনুষ্ঠানিকভাবে শব্দটি উদ্যাপনের আহ্বান জানান। এরপর ২০১১ সালের ২৩ মার্চ প্রথমবারের মতো ‘ওকে দিবস’ উদ্যাপিত হয়।
আজ সেই ২৩ মার্চ, ওকে দিবস। দৈনন্দিন যোগাযোগে শব্দটি আমাদের যে কী পরিমাণ উপকার করে চলেছে, তা বলাই বাহুল্য। ফলে এই শব্দের সম্মানে একটি দিন উদ্যাপন করা যেতেই পারে।
তথ্যসূত্র: প্রথম আলো