খেলা শুরুর বাঁশি বাজার আগে রিয়ালের সম্ভাবনা দেখেননি অনেকেই। বেশি দিন আগের কথা নয় মাত্র ১১ মাস আগেই ম্যানচেস্টার সিটির মাঠ ইতিহাদে ৪-০ গোলে বিধ্বস্ত হয়ে এসেছে রিয়াল। ২০১৮ সাল থেকে সিটিও চ্যাম্পিয়নস লিগে নিজেদের ঘরে হারেনি। শুধু কী তাই, ইতিহাদে রিয়ালও সিটিকে কখনো হারাতে পারেনি। পরিসংখ্যানের এসব চোখ রাঙানিতে রিয়ালের সমর্থকেরাও হয়তো গতকাল রাতের ম্যাচের আগে তেমন আশা দেখেননি।
রিয়াল মাদ্রিদ কোচ কার্লো আনচেলত্তি কথাটা বলেছেন ইতিহাদে শেষ বাঁশি বাজার পর। কিন্তু চ্যাম্পিয়নস লিগে রিয়াল ১৪বার শিরোপা তো আর এমনিতেই জেতেনি! ফুটবলের রোমান্টিক সমর্থকেরা বলেন, এই প্রতিযোগিতার সঙ্গে মাদ্রিদের ক্লাবটির কোনো একটা সম্পর্ক আছে, যেন এই প্রতিযোগিতা জিততেই রিয়ালের জন্ম! আর তাই চ্যাম্পিয়নস লিগে অনেকবারই অসম্ভব সমীকরণ কিংবা পরিস্থিতি থেকেও জয় তুলে নিয়েছে রিয়াল। গতকাল রাতের পরিস্থিতি তেমন না হলেও উল্লেখিত পরিসংখ্যানগুলো ঠিকই চোখ রাঙাচ্ছিল।
কিন্তু শেষ বাঁশি বাজার পর কি দেখা গেল? অতিরিক্ত সময় পর্যন্ত ম্যাচ ১-১ গোলে ড্র। টাইব্রেকারে সিটিকে ৪-৩ গোলে হারিয়ে রিয়ালই উঠল চ্যাম্পিয়নস লিগের সেমিফাইনালে। প্রথম লেগ ৩-৩ গোলে ড্র হয়েছিল। জয়ের পর আনচেলত্তি তাই বলেছেন, ‘সবাই ভেবেছিল আমরা শেষ, কিন্তু রিয়াল মাদ্রিদ কখনো মরে না।’
টাইব্রেকারে সিটির মাতেও কোভাচিচ ও বেনার্দো সিলভার শট ঠেকিয়েছেন রিয়ালের গোলকিপার আন্দ্রে লুনিন। তার আগে ম্যাচের ১২ মিনিটে রিয়ালের হয়ে গোল করেন রদ্রিগো। যদিও ৭৬ মিনিটে কেভিন ডি ব্রুইনার গোলে সমতায় ফেরে সিটি। গোটা ম্যাচে স্বাগতিকদের আধিপত্যই ছিল বেশি। ৬৮ শতাংশ সময় বল দখলে রেখে ৩৩টি শট নিয়েছে সিটি। আনচেলত্তি জানতেন এমন কিছুর মুখোমুখিই হতে হবে। সে জন্যই সম্ভবত একটু বেশিই রক্ষণাত্মক ছিলেন।
ইতালিয়ান এই কোচ জানতেন, ইতিহাদ জয় করতে হলে নিজেদের প্রাচীর অটুট রেখে সুযোগের সদ্ব্যবহার করতেই হবে। রদ্রিগো, লুনিন কিংবা টাইব্রেকারে জয়সূচক শট নেওয়া রুডিগার ঠিক সেই কাজটাই করেছেন।
জয়ের পর রিয়াল কোচ আনচেলত্তিও ‘মুভিস্টার’কে বললেন সে কথা, ‘এখান (ইতিহাদ) থেকে বেঁচে ফেরার একটাই উপায়—সুযোগের সদ্ব্যবহার করতে হবে। আমরা সেটা করেছি এরপর রক্ষণভাগ ভালোভাবে সামলেছি। সিটির বিপক্ষে এটা ছাড়া আর কোনো পথ নেই।’
আনচেলত্তি জানিয়েছেন, ম্যাচটা টাইব্রেকারে গড়ানোর পর বুঝে গিয়েছিলেন সেমিফাইনালে তাঁরাই উঠবেন। সিটির মতো প্রবল প্রতিপক্ষকে অতিরিক্ত সময় পর্যন্ত ঠেকিয়ে রাখতে পারায় সম্ভবত এই আত্মবিশ্বাসটা জন্মেছিল। তবে সবকিছুর মূলে যে প্রেরণা—সেটা সবার আগে স্মরণ করেছেন রিয়াল কোচ, ‘আমি অনেকবারই রিয়াল মাদ্রিদকে এটা (অসম্ভব জায়গা থেকে জয়) করতে দেখেছি। এটার কারণ বোধ হয় (রিয়ালের) ব্যাজটা। এটা আপনার ভেতর থেকে এমন কিছু বের করে আনবে, যেটা আপনি নিজেই জানতেন না যে আপনার ছিল! টাইব্রেকারে বুঝে গিয়েছিলাম যে আমরাই যাচ্ছি (সেমিফাইনালে)। আন্দ্রে লুনিন দারুণ একটা ম্যাচ খেলেছে।’
সিটিকে তাঁদেরই মাঠে হারানোর অনুভূতিটা দারুণভাবে প্রকাশ করেছেন রিয়াল ডিফেন্ডার নাচো। সেটা হয়তো রিয়াল সমর্থকদেরও মনের কথা। মুভিস্টারকে নাচো বলেছেন, ‘এসব জাদুকরী রাত, ছোট বেলায় যে রাতগুলোর স্বপ্ন দেখতাম। গায়ের রোম দাঁড়িয়ে যাচ্ছে!’
তথ্যসূত্রঃ প্রথম আলো
সম্পাদক : সাবিনা খানম,
প্রকাশক : এডভোকেট খোকন চন্দ্র গোপ,
ব্যবস্থাপনা সম্পাদক : মোঃ তারিকুল ইসলাম,
বার্তা সম্পাদক : মোঃ জাহাঙ্গীর আলম
Copyright © 2024 ইউনিয়ন সংবাদ. All rights reserved.