ডায়াবেটিস এবং যক্ষ্মা আমাদের দেশের স্বাস্থ্য সমস্যাগুলির মধ্যে অন্যতম। শারীরিক পরিশ্রম কমে যাওয়া, খাদ্যাভ্যাসের পরিবর্তন, জেনেটিক ও অন্যান্য কারণে ডায়াবেটিস আক্রান্তের সংখ্যা প্রতিনিয়ত বাড়ছে। অন্যদিকে যক্ষ্মা যা একটি জীবাণুঘটিত রোগ, আমাদের সমাজে সবসময় বিদ্যমান এবং প্রধানত দরিদ্র শ্রেণি বেশি আক্রান্ত। যেহেতু যক্ষ্মা একটি জীবাণুঘটিত রোগ, তাই যেসব রোগে বা কারণে শরীরে রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা কমে যায়, ওই রোগীদের যক্ষ্মায় আক্রান্ত হওয়ার ঝুঁকি বেড়ে যায়। আমাদের একটি বিশাল জনগোষ্ঠী ডায়াবেটিস রোগে আক্রান্ত। আর শরীরে রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা কমে যাওয়ার অন্যতম একটি কারণ হলো ডায়াবেটিস বা বহুমূত্র রোগ। ডায়াবেটিস রোগী যক্ষ্মায় আক্রান্ত হলে অনেক ক্ষেত্রে রোগনির্ণয় করতে যথেষ্ট দেরি হয়ে যায়। কারণ ডায়াবেটিস রোগীদের যক্ষ্মা রোগের লক্ষণ সাধারণ যক্ষ্মা রোগীদের মতো নাও হতে পারে। যদিও যক্ষ্মা রোগে প্রধানত ফুসফুস আক্রান্ত হয়ে থাকে কিন্তু ডায়াবেটিস রোগীর ক্ষেত্রে ফুসফুস-বহির্ভূত যক্ষ্মা আক্রান্তের হার অনেক বেশি।
যক্ষ্মা রোগ নির্ণয়ের অন্যতম পদ্ধতি হলো কফ পরীক্ষা করা এবং বুকের X-ray করা। এ দুই ক্ষেত্রে দেখা যায় অনেক সময় X-ray-তে যক্ষ্মা রোগের লক্ষণ সঠিকভাবে প্রকাশ পায় না এবং কফের মধ্যে জীবাণু পাওয়ার হার অনেক কম। তাই ডায়াবেটিস রোগীর ক্ষেত্রে যক্ষ্মা রোগনির্ণয়ের জন্য ঐরময Degree of suspicion দরকার। যক্ষ্মা রোগের চিকিত্সার ক্ষেত্রে ডায়াবেটিস রোগীদের বেলায় অতিরিক্ত সাবধানতার দরকার হয়। সঠিক নিয়মে পূর্ণমাত্রায় ওষুধ সেবন করলে ডায়াবেটিস রোগীদের বেলায়ও যক্ষ্মা রোগের ওষুধ সমানভাবে কার্যকর। তবে ডায়াবেটিস রোগীদের রক্তে শর্করা নিয়ন্ত্রণ খুবই জরুরি। কারণ রক্তে শর্করার পরিমাণ বেশি হলে যক্ষ্মা বিভিন্ন অঙ্গে ছড়িয়ে পড়তে পারে এবং যক্ষ্মা রোগের ওষুধ সঠিকভাবে কাজ নাও করতে পারে। সাধারণত বেশির ভাগ যক্ষ্মা রোগীর ক্ষেত্রে ডায়াবেটিস নিয়ন্ত্রণের জন্য ইনসুলিন প্রয়োজন হয়। তবে যাদের রক্তে গ্লুকোজের মাত্রা এত বেশি নয় এবং অন্য কোনো ডায়াবেটিসজনিত জটিলতা নেই, তাদের ক্ষেত্রে প্রাথমিকভাবে ইনসুলিনের মাধ্যমে ডায়াবেটিস নিয়ন্ত্রণে এনে পরবর্তীতে ইনসুলিনের পরিবর্তে ডায়াবেটিসের জন্য মুখে খাওয়ার ওষুধ দেওয়া যেতে পারে। এ ক্ষেত্রে যক্ষ্মার এবং ডায়াবেটিসের ওষুধ একই সঙ্গে প্রয়োগ করার ফলে কোনো পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া হচ্ছে কিনা তার প্রতি বিশেষ লক্ষ্য রাখতে হবে।
ডায়াবেটিস এমন একটি রোগ যার দ্বারা শরীরের বেশির ভাগ অঙ্গ-প্রত্যঙ্গ ক্ষতিগ্রস্ত হয়। আবার যক্ষ্মা রোগও অনেক সময় শরীরের বিভিন্ন জায়গায় ছড়িয়ে পড়তে পারে। এসব ক্ষেত্রে চিকিত্সার সময় অতিরিক্ত সাবধানতা প্রয়োজন। যেমন যদি কোনো ডায়াবেটিস ও যক্ষ্মা আক্রান্ত রোগীর বুকে পানি জমে সে ক্ষেত্রে রোগীকে যক্ষ্মা রোগের ওষুধের সঙ্গে স্টেরয়েড জাতীয় ওষুধ দিতে হয় যা রক্তে শর্করার পরিমাণ বাড়ায়। এ ক্ষেত্রে ডায়াবেটিস নিয়ন্ত্রণে স্বাভাবিক প্রয়োজনের তুলনায় বেশি ইনসুলিন প্রয়োজন হয়। যেসব রোগী দীর্ঘদিন থেকে ডায়াবেটিসে ভুগছেন তাদের বেলায় কিডনির কার্যকারিতা কমে যেতে পারে। এসব ক্ষেত্রে যেসব যক্ষ্মার ওষুধ কিডনি দ্বারা শরীর থেকে নির্গমন হয়, সেগুলোর মাত্রা কমিয়ে দিতে হতে পারে, যেমন ইথামবিউটস এবং স্ট্রেপটোমাইসিন।
তাই তো ডায়াবেটিস রোগীদের চিকিৎসার ব্যাপারে আরও সতর্ক হতে হবে।
লেখক: অধ্যাপক ডা. এ কে এম মোস্তফা হোসেন
বক্ষব্যাধি বিশেষজ্ঞ, মেডিনোভা, মালিবাগ, ঢাকা।
তথ্যসূত্র: বিডি প্রতিদিন
সম্পাদক : সাবিনা খানম,
প্রকাশক : এডভোকেট খোকন চন্দ্র গোপ,
ব্যবস্থাপনা সম্পাদক : মোঃ তারিকুল ইসলাম,
বার্তা সম্পাদক : মোঃ জাহাঙ্গীর আলম
Copyright © 2024 ইউনিয়ন সংবাদ. All rights reserved.