জাতীয় পার্টির প্রধান পৃষ্ঠপোষক রওশন এরশাদ এইবার নিজেকে দলের চেয়ারম্যান হিসেবে ঘোষণা দিয়েছেন। একই সঙ্গে জাপার প্রেসিডিয়াম সদস্য কাজী মামুনুর রশীদকে দলের মহাসচিব হিসেবে দায়িত্ব দিয়েছেন। আর জাতীয় পার্টির বর্তমান চেয়ারম্যান জিএম কাদের ও মহাসচিব মুজিবুল হক চুন্নুকে দায়িত্ব থেকে অব্যাহতি দিয়েছেন।
আজ রোববার বেলা পৌনে একটার দিকে গুলশানের বাসায় মতবিনিময় সভার আয়োজন করে নিজের এ সিদ্ধান্তের কথা জানান রওশন এরশাদ। তিনি বলেন, ‘দলের গঠনতন্ত্রের ২০-এর ১ ধারা অনুযায়ী জিএম কাদের ও চুন্নুকে অব্যাহতি প্রদান করলাম।’
তবে ‘অব্যাহতির’ ঘোষণার পর জাতীয় পার্টির মহাসচিব মুজিবুল হক চুন্নু আজ প্রথম আলোকে বলেন, ‘এসব বিষয়কে গুরুত্ব দিই না। কারণ এগুলো একাধিকবার হয়েছে। তবে তারা এসব করে জাতীয় পার্টিতে কোনো ভাঙন ধরাতে পারেনি। তাঁরা যা করেছেন সেটি তাদের এখতিয়ার-বহির্ভূত।’
দলের পরবর্তী কাউন্সিলের আগ পর্যন্ত তাঁর ঘোষিত মহাসচিব কাজী মামনুর রশীদ দলের সাংগঠনিক কার্যক্রম পরিচালনা করবেন বলে আজ জানান রওশন এরশাদ।
রওশন এরশাদ আরও বলেন, ‘জাতীয় পার্টি ক্ষতিগ্রস্ত হোক তা মেনে নিতে পারি না। জাপা ক্রান্তিকাল অতিক্রম করছে। জিএম কাদের এবং মুজিবুল হক চুন্নু দলকে ব্যাপকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত করেছেন।’
রওশন এরশাদ তার বাসভবনের নিচে এ মতবিনিময় সভার আয়োজন করেন। এতে জাতীয় পার্টির বহিষ্কৃত, অব্যাহতিপ্রাপ্ত, স্বেচ্ছায় পদত্যাগকারী নেতা কর্মীরা অংশ নেন।
এ মতবিনিময় সভায় উপস্থিত ছিলেন জাতীয় পার্টি থেকে অব্যাহতি পাওয়া প্রেসিডিয়াম সদস্য সুনীল শুভ রায়, শফিকুল ইসলাম, জাতীয় পার্টি থেকে বহিষ্কৃত এবং রওশন এরশাদের মুখপাত্র কাজী মামুনুর রশীদ।
আরও উপস্থিত ছিলেন সাবেক প্রেসিডিয়াম সদস্য দেলোয়ার হোসেন খান, সাবেক সংসদ সদস্য গোলাম সারওয়ার মিলন, জিয়াউল হক মৃধা, ভাইস চেয়ারম্যান আমানত হোসেন, জাহাঙ্গীর আলম, নুরুল হক, খোরশেদ আলম, ভাইস চেয়ারম্যান ও সাবেক এমপি ইয়াহিয়া চৌধুরী, জাতীয় ছাত্র সমাজের প্রতিষ্ঠাতা সভাপতি রফিকুল হক, এরশাদপুত্র ও দলের যুগ্ম মহাসচিব সাদ এরশাদ।
সিদ্ধান্ত ঘোষণার আগে জাপা থেকে অব্যাহতি পাওয়া প্রেসিডিয়াম সদস্য শফিকুল ইসলাম রওশন এরশাদের উদ্দেশে বলেন, ‘দলের মধ্যে আবর্জনা পরিষ্কার আপনার নেতৃত্বে করতে চাই। আপনি জাপার হাল ধরবেন। জিএম কাদের ও চুন্নুকে দেশের নেতা-কর্মীরা নেতৃত্বে দেখতে চায় না। আজকে থেকে আপনাকে চেয়ারম্যান হিসেবে দেখতে চাই।’
ভাইস চেয়ারম্যান ইয়াহিয়া চৌধুরী বলেন, ‘বাড়ির দারোয়ানেরা এখন মালিক হতে চায়। আপনার নেতৃত্বে দল করেছি। এ সংকটে আপনাকে আবার এগিয়ে আসতে হবে।’
প্রেসিডিয়াম সদস্য সুনীল শুভ রায় বলেন, দলের মধ্যে বর্গির হানা পড়েছে। আবার আপনাকে দায়িত্ব নিয়ে দল রক্ষা করতে হবে।
জি এম কাদের জাতীয় পার্টির প্রতিষ্ঠাতা প্রয়াত হুসেইন মোহাম্মদ এরশাদের ছোট ভাই। এরশাদপত্নী রওশন এরশাদের সঙ্গে জি এম কাদেরের রাজনৈতিক টানাপোড়েন সব সময়ই লেগে ছিল। এর আগেও নিজেকে চেয়ারম্যান ঘোষণা করেছেন রওশন এরশাদ। তবে গত ৭ জানুয়ারির নির্বাচনের আগে রওশন এরশাদের সঙ্গে জি এম কাদেরের দ্বন্দ্ব আরও প্রকট হয়। রওশন এরশাদ এবং তাঁর ছেলে রাহগির আলমাহি এরশাদ নির্বাচনে অংশই নেননি। আর ওই নির্বাচনের পর দলের একাংশ জি এম কাদেরের ভূমিকা নিয়ে প্রশ্ন তোলে।
জি এম কাদেরের নেতৃত্বাধীন জাতীয় পার্টি (জাপা) থেকে বাদ পড়া নেতাদের এক জোট হওয়ার চেষ্টার খবর পাওয়া যাচ্ছিল কদিন ধরে। সংশ্লিষ্ট দায়িত্বশীল সূত্র জানিয়েছে, হয় তাঁরা সংগঠিত হয়ে জাপার প্রধান পৃষ্ঠপোষক ও জ্যেষ্ঠ নেতা রওশন এরশাদের নেতৃত্বে পৃথক অবস্থান নেবেন। না হয় ‘তৃণমূল জাতীয় পার্টি’ নামে দল গঠন করে রাজনৈতিক তৎপরতা শুরু করবেন।
এরই অংশ হিসেবে গত বৃহস্পতিবার জাপার কেন্দ্রীয় ও ঢাকা মহানগরের বেশ কিছু নেতা-কর্মী জোটবদ্ধ হয়ে দল থেকে পদত্যাগের ঘোষণা দেন। তাঁদের সংখ্যা ৬৬৮ বলে জানিয়েছিলেন, ‘গণপদত্যাগ’ কর্মসূচির আয়োজক শফিকুল ইসলাম। তাঁকে জাপার প্রেসিডিয়াম সদস্য ও ঢাকা মহানগর উত্তর কমিটির আহ্বায়কের পদ থেকে সদ্য অব্যাহতি দেওয়া হয়েছে। শুক্রবার বিকেলে জাতীয় প্রেসক্লাবে সংবাদ সম্মেলন করে তাঁরা জাপার চেয়ারম্যান জি এম কাদের ও মহাসচিব মুজিবুল হকের (চুন্নু) বিরুদ্ধে স্বেচ্ছাচারিতার অভিযোগ তুলে তাঁদের নেতৃত্বে দল না করার কথা জানান।
তথ্যসূত্র: প্রথম আলো