সব প্রশংসা একমাত্র আল্লাহপাকের যিনি আমাদের রমজান মাস নসিব করেছেন। অসংখ্য দরুদ ও সালাম বর্ষিত হোক বিশ্বনবী মুহাম্মদুর রসুলুল্লাহ সাল্লালাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের ওপর, যার মাধ্যমে আমরা আল্লাহর নাজিলকৃত সর্বশেষ আসমানি কিতাব আল কোরআন পেয়েছি। রমজান হচ্ছে বছরের শ্রেষ্ঠ মাস। এ জন্য শ্রেষ্ঠ, কারণ এ মাসেই নাজিল হয়েছে কোরআন। কোরআন হচ্ছে মানব জাতির জন্য হেদায়েত ও সৎ পথযাত্রীদের জন্য সুস্পষ্ট পথনির্দেশনা, ন্যায়-অন্যায়ের পার্থক্য বিধানকারী (সুরা বাকারা আয়াত-১৮৫)। তাই পবিত্র কোরআন পাঠ করে আমাদের প্রত্যেককে ন্যায়-অন্যায়ের পার্থক্য, হালাল-হারাম বুঝে অন্যায় ও অসৎ কর্মগুলো পরিহার করে সঠিক ও সৎ পথ অনুসরণের মাধ্যমে আল্লাহর সন্তুষ্টি ও জান্নাত লাভে সচেষ্ট হতে হবে। দ্বিতীয়ত. এই জান্নাত লাভ সহজতর করার জন্য আল্লাহ সুবহানুতায়ালা ইসলামের প্রধান স্তম্ভ সালাত যাদের ওপর ফরজ করেছেন তাদের ওপর রমজান মাসের সিয়ামও ফরজ করেছেন, অর্থাৎ শরিয়তসম্মত ওজর ব্যতীত প্রত্যেক বিবেকবান, প্রাপ্ত বয়স্ক, সিয়াম/রোজা পালনে সক্ষম, হায়েজ-নেফাজ থেকে মুক্ত মুসলমান নর-নারীদের ওপর সিয়াম পালন করা ফরজ করেছেন। উদ্দেশ্য যাতে আমরা সিয়াম পালনের মাধ্যমে তাকওয়া অর্জন করতে পারি। সিয়াম পালনের মাধ্যমে আল্লাহভীতি কী প্রক্রিয়ায় সৃষ্টি হচ্ছে তা সহজেই অনুমেয়। কারণ মাসজুড়ে সিয়াম পালনকালে আমরা ধনী-গরিব সবাই (শরিয়তসম্মত ওজর ব্যতীত) ফজর হওয়ার পর থেকে শুরু করে সূর্যাস্ত পর্যন্ত আল্লাহর নির্দেশে সব ধরনের হালাল খাদ্য ও পানীয় দ্রব্যাদি বর্জনসহ বৈধ স্ত্রী সহবাস থেকেও বিরত থেকে তাঁর নির্দেশ পালন করে যাচ্ছি। এ ক্ষেত্রে আমরা ধনী-গরিব প্রত্যেকেই তৃষ্ণার্ত ও ক্ষুধার্থ থাকার কষ্ট সমভাবে অনুভব করে এক কাতারে শামিল হতে পারছি। তৃতীয়ত. সিয়াম পালনরত প্রত্যেক মুসলিম মিথ্যা কথা বলা ও পরনিন্দা করা থেকে এবং চোগলখুরিসহ সব ধরনের অশ্লীল ও অন্যায় কাজ টানা একটি মাস না বলা ও না করার কারণে তাকওয়া অবলম্বনের প্রশিক্ষণে প্রশিক্ষিত হয়ে দীনের পথে চলার তৌফিক অর্জন করতে পারি। আমরা সিয়ামরত অবস্থায় উল্লিখিত কার্যাবলি থেকে বিরত থাকতে না পারলে শুধু পানাহার ত্যাগ আল্লাহর প্রয়োজন নেই। (বুখারি-১৭৭০)। কাজেই আমাদের অবশ্যই সিয়াম পালনের উদ্দেশেই পানাহার ত্যাগ করতে হবে উপবাসের জন্য নয়।
চতুর্থত. এ মাসের মধ্যে রয়েছে বছরের শ্রেষ্ঠতম রাত। রমজান মাসের শেষ দশকের বেজোড় সাতটি দিনের মধ্যে এ রাত নিহিত। ওই রাতে ইবাদত করার সৌভাগ্যবান ব্যক্তিরা পাবেন এক হাজার মাসেরও অধিক নেক আমলের সওয়াব যা আল্লাহর পক্ষ থেকে এ উম্মতের প্রতি বিশেষ দান। (সুরা-কদর-৩)। এক হাজার মাস হচ্ছে ৮৩ বছরের বেশি। তাই মুসলিম হিসেবে আমাদের স্মরণ রাখা উচিত যে, আমরা অনেকেই এত বছর হায়াত পাই না। তাই আল্লাহর নেয়ামত গ্রহণে সচেষ্ট থাকা উচিত। এ রাতের ফজিলত সম্পর্কে আবু হুরাইরা (রা.) বর্ণিত হাদিসে রসুল (সা.) বলেছেন, যে ব্যক্তি ইমানের সঙ্গে ও সওয়াবের আশায় রমজানের রোজা রাখল, তার পূর্ববর্তী সব গুনাহ মাফ করে দেওয়া হবে। আর যে ব্যক্তি ইমানের এবং সওয়াবের আশায় লাইলাতুল কদরের রাতে ইবাদত করল তার পূর্ববর্তী সব গুনাহ মাফ করে দেওয়া হবে। (বোখারি-১৮৭৩)। পঞ্চমত. সাহরি খাওয়ায় কল্যাণ ও বরকত লাভ হয়। আনাস ইবনে মালেক (রা.) থেকে বর্ণিত নবী করিম (সা.) বলেছেন, তোমরা সাহরি খাও। কারণ সাহরিতে বরকত নিহিত (বুখারি-১৭৮৯)। ষষ্ঠত. আবু হুরাইরা (রা.) বর্ণিত হাদিসে রসুল (সা.) বলেছেন, রোজা দোজখের আগুনের জন্য ঢালস্বরূপ। রোজাদার আল্লাহর জন্য খাদ্য, পানীয় ও কাম-স্পৃহা বর্জন করে থাকে। তাই রোজাদারদের পুরস্কার আল্লাহ নিজ হাতে প্রদান করবেন। (বুখারি-১৭৬১)।
লেখক : বীর মুক্তিযোদ্ধা।
তথ্যসূত্রঃ বাংলাদেশ প্রতিদিন