রমজানে কিছু নিত্যপ্রয়োজনীয় জিনিসের দাম কমানোর জন্য সরকার নানা পদক্ষেপ নিলেও শেষ পর্যন্ত সেই অস্বস্তি নিয়েই শুরু হচ্ছে পবিত্র রমজান। গত ৮ ফেব্রুয়ারি আমদানি শুল্ক কমানোর পর বাজারে সয়াবিন তেলের দাম কমলেও চিনি ও খেজুরের দাম কমেনি। অথচ এ দুটি পণ্যেরই সরকার আমদানি শুল্ক কমিয়েছে। এছাড়া বাজারে দাম বাড়ার তালিকায় নতুন করে যুক্ত হয়েছে চাল, ছোলা, এ্যাংকর ডাল, গরুর মাংস, ব্রয়লার মুরগি ও আলু।
সংশ্লিষ্টরা বলেছেন, আগামী মঙ্গলবার থেকে প্রথম রমজান শুরু হতে যাচ্ছে। এখন এই পণ্যগুলোর দাম বাড়ায় ভোক্তারা বিশেষ করে স্বল্প আয়ের মানুষের কষ্ট বাড়বে। গতকাল শনিবার রাজধানীর কারওয়ান বাজার ও শান্তিনগর বাজারসহ কয়েকটি বাজারে খোঁজ নিয়ে দেখা যায়, সপ্তাহের ব্যবধানে মোটা ও মাঝারি মানের চালের দাম বেড়েছে। প্রতি কেজিতে দুই টাকা বেড়ে মাঝারি মানের চাল পাইজাম/লতা ৫২ থেকে ৫৬ টাকা ও মোটা চাল ইরি/স্বর্ণা ৪৮ থেকে ৫২ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। এছাড়া, কেজিতে পাঁচ টাকা বেড়ে এ্যাংকর ডাল ৮০ থেকে ৯০ টাকা, ছোলা ১০০ থেকে ১১০ টাকা, গরুর মাংস কেজিতে ৫০ টাকা বেড়ে ৭৫০ থেকে ৭৮০ টাকা, ব্রয়লার মুরগি কেজিতে ১০ টাকা বেড়ে ২০০ থেকে ২১০ টাকায় ও আলু কেজিতে পাঁচ টাকা বেড়ে ৩০ থেকে ৩৫ টাকায় বিক্রি হচ্ছে।
সরকারের বিপণন সংস্থা ট্রেডিং করপোরেশন অব বাংলাদেশও (টিসিবি) গতকাল তাদের বাজারদরের প্রতিবেদনে এসব পণ্যের দাম বাড়ার তথ্য তুলে ধরেছে। এছাড়া, আমদানি শুল্ক কমানোর পর চিনির দাম উলটো বেড়েছে। চড়া দামে বিক্রি হচ্ছে খেজুরও। ব্যবসায়ীরা বলেছেন, সরকার প্রতি কেজি চিনি আমদানি শুল্কে যে ছাড় দিয়েছে, তাতে চিনির দামে খুব বেশি প্রভাব পড়বে না। এছাড়া, বিলাসী পণ্যের তালিকায় খেজুরকে অন্তর্ভুক্ত করায় বাড়তি শুল্ক দিতে হচ্ছে। ফলে খেজুর আমদানিতে শুল্ক কমানো হলেও দেশের বাজারে খুব বেশি প্রভাব পড়ছে না।
গতকাল রাজধানীর বিভিন্ন খুচরা বাজারে প্রতি কেজি খোলা চিনি ১৪০ থেকে ১৪৫ টাকা ও প্যাকেট চিনি ১৫০ থেকে ১৫৫ টাকায় বিক্রি হতে দেখা গেছে। তবে পাড়া-মহল্লার দোকানগুলোতে আরও বেশি দামেও বিক্রি হচ্ছে। সরকারের বিপণন সংস্থা টিসিবির তথ্য বলছে, এক মাস আগে রাজধানীর খুচরা বাজারে প্রতি কেজি চিনি বিক্রি হয়েছে ১৩০ থেকে ১৩০ টাকায়। আর গত বছর এই সময়ে রাজধানীর খুচরা বাজারে প্রতি কেজি খোলা চিনি ১১৫ থেকে ১২০ টাকায় বিক্রি হয়েছে। এ হিসেবে এক বছরের ব্যবধানে প্রতি কেজি চিনিতে দাম বেড়েছে ২১ দশমিক ৭৪ শতাংশ।
ভোক্তাদের প্রশ্ন? গত ৮ ফেব্রুয়ারি আমদানি শুল্ক কমানোর আগে চিনির দাম কম ছিল। কিন্তু শুল্ক কমানোর পর চিনির দাম আরও বেড়েছে। তাহলে শুল্ক কমিয়ে কী লাভ হলো? ভোক্তাদের অভিযোগ, তাহলে কি কারসাজি চক্রের কাছে আমরা জিম্মি? না হলে চিনির দাম বাড়বে কেন?
বাণিজ্য প্রতিমন্ত্রী আহসানুল ইসলাম টিটু সম্প্রতি এক অনুষ্ঠানে বলেছেন, দেশে চিনির যে পরিমাণ মজুত আছে। তাতে চিনির কোনো সংকট হওয়ার কোনো সম্ভাবনা নেই। তিনি বলেন, কয়েক দিন আগে চিনির একটি গুদামে আগুন লেগেছিল। কিন্তু তাতে কোনো সমস্যা হবে না। কেউ এ ঘটনাকে পুঁজি করে চিনির দাম বাড়ালেও তার বিরুদ্ধে তাৎক্ষণিক ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
খেজুর আমদানিকারকরা জানিয়েছেন, খেজুর আমদানি শুল্ক ২৫ শতাংশ থেকে কমিয়ে ১৫ শতাংশ করা হয়েছে। এর ফলে আগে সব মিলিয়ে ১৬৪ টাকা কর বাবদ দিতে হতো। এখন তা ৩৩ টাকা কমবে। আমদানিকারকরা জানান, গত বছর রোজার আগে খেজুর আমদানিতে করভার ছিল ১০ শতাংশ। চলতি ২০২৩-২৪ অর্থবছরে বাজেটে খেজুরকে লাক্সারি পণ্য হিসেবে অন্তর্ভুক্ত করা হয়েছে। খেজুর আমদানিতে করভার ও শুল্কায়ন মূল্য বাড়ানো হয়েছে।
বাংলাদেশ ফ্রেশ ফ্রুটস ইম্পোর্টার্স অ্যাসোসিয়েশনের সভাপতি সিরাজুল ইসলাম এ প্রসঙ্গে ইত্তেফাককে বলেন, বিশ্ব বাজারে খেজুরের দাম বেড়েছে। বেড়েছে ডলারের দামও। তিনি বলেন, খেজুরের এলসি যে মূল্যে খুলছি, সে অনুযায়ী শুল্ক নির্ধারণ হলে খেজুরের দাম কম পড়ত। কিন্তু বিলাসী পণ্যের তালিকায় খেজুরকে অন্তর্ভুক্ত করায় বাড়তি শুল্ক দিতে হচ্ছে। ফলে খেজুর আমদানিতে শুল্ক কমানো হলেও দেশের বাজারে খুব বেশি প্রভাব পড়বে না।
তথ্যসূত্র: ইত্তেফাক