পাপ থেকে মূলত পাপ হয়। ছোট ছোট পাপ যেভাবে বড় হয়ে দেখা দেয়। হোক সেটা বড় কিংবা ছোট। বড় পাপ থেকে সাধারণত মানুষ সতর্ক থাকলেও অনেক ক্ষেত্রে ছোট পাপকে তেমন কোনো গুরুত্বই দেয় না। অথচ এর থেকেও নিরাপদ থাকতে আল্লাহর নবী উম্মতকে জোরালো নির্দেশ দিয়েছেন।
হাদিসের পরিভাষায় একে ‘মুহাক্কারাত’ বলে। এ শব্দের ব্যাখ্যায় হাদিসবিশারদরা বলেছেন, এটি এমন পাপ, যার প্রতি মানুষ ভ্রুক্ষেপ করে না।
ইমাম মুনাভি (রহ.) বলেন, ‘মুহাক্কারাত হলো ছোট ছোট পাপ। মহানবী (সা.) তা থেকে বিরত থাকতে বলেছেন, কারণ তা বড় বড় পাপের পথে মানুষকে পরিচালিত করে।
যেমন—ছোট ছোট আনুগত্য মানুষকে বড় বড় আনুগত্যের জন্য প্রস্তুত করে।’ (ফয়জুল কাদির : ৩/১৬৪)
সাহাল ইবনে সাঈদ (রা.) গুনাহের ব্যাপারে সতর্ক করে বলেন, ‘তোমরা ছোট ছোট গুনাহ থেকে সাবধান হও। ছোট ছোট গুনাহের উদাহরণ ওই লোকদের মতো, যারা কোনো খোলা মাঠে বা প্রান্তরে গিয়ে অবস্থান করল এবং তাদের প্রত্যেকেই কিছু কিছু করে লাকড়ি সংগ্রহ করে নিয়ে এলো। শেষ পর্যন্ত তারা এ পরিমাণ লাকড়ি সংগ্রহ করল, যা দিয়ে তাদের খাবার পাকানো সম্পন্ন হলো।
নিশ্চয়ই (তাওবা ব্যতীত) ছোট ছোট গুনাহ যখন জমে যাবে, তখন তাদেরকে ধ্বংস করে ফেলবে।’
অন্য এক বর্ণনায় এসেছে, ‘তোমরা ছোট ছোট গুনাহ থেকে সাবধান হও, কেননা সেগুলো মানুষের কাঁধে জমা হতে থাকে, অতঃপর তাকে ধ্বংস করে দেয়।’ (সহিহুল জামে : ২৬৮৬)
এ হাদিসের ব্যাখ্যায় ইমামাভ বিভিন্ন মত উল্লেখ করেছেন। যেমন—ইমাম সিন্ধি (রহ.) বলেন, এখানে নবী কারিম (সা.) ছোট ছোট গুনাহকে তুচ্ছ জ্ঞান করে ওই ব্যাপারে উদাসীন হতে নিষেধ করেছেন। সেগুলোর ভয়াবহতা ভুলে নিশ্চিন্ত হওয়া থেকে সতর্ক করেছেন।
কারণ এ উদাসীনতা মানুষকে ধ্বংস ও পতনের দিকে নিয়ে যায়।‘মুহাক্কারাত’ হলো ওই সব সগিরা গুনাহ, যা পরিত্যাগের ব্যাপারে মানুষ তেমন সতর্কতা অবলম্বন করে না।
ইমাম মুনাবি (রহ.) বলেন, এর অর্থ হলো সগিরা গুনাহ। কারণ সগিরা গুনাহ কবিরা গুনাহের পথকে সুগম করে দেয়।
ইমাম গাজালি (রহ.) বলেন, ছোট গুনাহগুলো এক এক করে জমা হতে থাকে। অতঃপর মৃত্যুর সময় এগুলোই ঈমানহারা হওয়ার কারণ হয়। কারণ ছোট ছোট গুনাহ মিলে বড় গুনাহে পরিণত হয় এবং মানুষের ধ্বংসের মাধ্যম হয়। (ইহইয়াউ উলুমিদ্দিন : ৩/৬০)
যেসব ছোট গুনাহকে মানুষ তেমন গুরুত্ব দেয় না, এগুলোকে তুলনা করা হয়েছে ছোট ছোট কাঠখড়ির সঙ্গে। যে কাঠখড়ির তেমন কোনো মূল্য নেই। কিন্তু অনেকগুলো একসঙ্গে হলে বড় কিছু ঘটাতে পারে। আর কিছু না হোক ছোট ছোট কাঠের টুকরা একত্র করা হলে রান্না করার ব্যবস্থা হয়ে যায়। অথচ যখন অল্প ছিল তখন তার কোনো গ্রহণযোগ্যতা ছিল না। এমনিভাবে ছোট ছোট গুনাহ যখন একত্র হবে তখন বিরাট আকার ধারণ করে মানুষের ধ্বংসের কারণ হবে।
তাই একজন মুমিনের জন্য আবশ্যক হলো সব ধরনের গুনাহ ও পাপাচার থেকে নিজেকে বাঁচিয়ে রাখা। কোনো গুনাহকেই ছোট মনে না করা। কারণ ছোট গুনাহগুলো তাওবা না করার ফলে অথবা বারবার করার কারণে বিরাট আকার ধারণ করে। ইমাম ইবনে কায়্যিম (রহ.) বলেন, দুনিয়া ও আখিরাতে গুনাহের কুপ্রভাব দেহ-মন উভয়ের জন্য এমনই ক্ষতিকর, যা আল্লাহ ছাড়া কেউ জানে না। তন্মধ্যে উল্লেখযোগ্য কয়েকটি হলো—
১. ইলম থেকে বঞ্চিত হওয়া। কারণ ইলম হচ্ছে নুর, যা আল্লাহ মানুষের অন্তরে দান করেন। আর গুনাহ ওই নুরকে নিভিয়ে দেয়।
২. রিজিক থেকে বঞ্চিত হওয়া।
৩. একাকীত্ব অনুভব হওয়া। কারণ গুনাহগার ব্যক্তি আল্লাহর কাছ থেকে দূরে সরে যায়। এ জন্য বহু মানুষের ভিড়েও সে যেন একা, নিঃসঙ্গ। দুনিয়ার সব সুখ একত্র হয়ে গেলেও তার সেই একাকীত্ব দূর করা সম্ভব নয়। এ বিষয়ে কেবল ওই ব্যক্তিই বুঝতে পারে, যার হৃদয় জাগ্রত থাকে। যদি ওই ব্যক্তি বুদ্ধিমান হয় তাহলে মৃত্যু যন্ত্রণা তাকে ঘায়েল করার আগেই একাকীত্বের সতর্কবাণী অনুধাবন করে তত্ক্ষণাৎ গুনাহ ছেড়ে দেবে। (আল জাওয়াবুল কাফি ১/৫২)
আল্লাহ আমাদের সব ধরনের গুনাহ পরিত্যাগ করে তাঁর পছন্দনীয় কাজ করার তাওফিক দান করুন।
তথ্যসূত্র: কালের কন্ঠ